আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস
ধনধান্য পুষ্পভরা অপূর্ব সুন্দর এ ধরিত্রী! এখন পর্যন্ত শুধু এ গ্রহেই পাওয়া গেছে প্রাণের অস্তিত্ব। এখানে রয়েছে মানুষসহ জানা অজানা কোটি কোটি প্রজাতির আবাস। এর বুকেই চলে আমাদের সব কর্মকাণ্ড। অথচ আমাদের প্রয়োজন মেটাতে তাকে প্রতিনিয়ত বিভক্ত করে চলেছি।
আমাদের বাসভূমিকে এ আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পালিত হয় বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। দিবসটির সঙ্গে গেলর্ড নেলসন জড়িয়ে রয়েছেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সদস্য। তারই হাত ধরে ১৯৭০ সালে পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা। এ আন্দোলনের ঢেউ লাগে বিশ্বনেতাদের গায়ে। তাদের প্রস্তাবনায় জাতিসংঘ ১৯৯২ সালে স্টকহোমে এক সম্মেলনের আয়োজন করে। এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে ১৯৯০ সালে আমরা পাই বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। দিবসটি পালনে বেছে নেয়া হয়েছে ২২ এপ্রিলকে। বিশ্বের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি দিবসটির উদ্দেশ্য। বিশ্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগও এ দিবস।
প্রতিনিয়ত জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। এর পরিধি বিশ্বব্যাপী। অর্থাত্ গোটা বিশ্বেই বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব আজ হুমকির মুখে। অন্যদিকে চলছে আমাদের প্রয়োজন মেটানোর দায়। সব মিলিয়ে আমরা হারাচ্ছি বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফলে ক্রমে বসবাসের অনুপোযুক্ত হয়ে উঠছে এ ধরিত্রী।মূলতঃ মানুষ তার ভোগ বিলাসকে চরিতার্থ করার লক্ষ্যেই চোখের সামনে বেশ কিছু পরিবেশ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে।
- দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে বসবাসের ও কৃষি জমির জন্য প্রয়োজনে ব্যাপক হারে গাছ কাটা হচ্ছে। এবং বণ্য পশূপাখি হারিয়ে যাচ্ছে এবং বাতাসে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব দেখা দিচ্ছে।
- পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করায় ভূমি-ধ্বস সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
- শিল্প কারখানার বর্জ খাল, নদী এমন কি সমুদ্রের পানির রাসায়নিক গুনাগুণ নষ্ট করছে। ইকো সিস্টেমের ভারসাম্যহীনতায় অনেক জলজ প্রানী ও উদ্ভীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।
- খনি থেকে তেল উঠানোর সময় তেল নিঃসরনে পরিবেশের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া অনেকসময় তেলবাহী জাহাজের দূঘর্টনায়ও সমুদ্রের পানি দূষিত হচ্ছে।
- শুধু তাই নয়, বিশ্ব এখন পারমানবিক বর্জের দায় কাধে নিয়ে আছে। বিশ্বের এখন ঝুকির মধ্যে আছে বেশ কিছু পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পৃথিবী এখন রেডিয়েশনের ভয়ে প্রকম্পিত।
- গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা তো বৃদ্ধি পাচ্ছেই। মেরু অঞ্চলের বরফগুলো গলে গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মেরু অঞ্চল সহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এর প্রভাব পড়ছে।
অথচ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের ধরিত্রীকে বাঁচাতেই হবে। কেননা আমাদের বাঁচতে হবে এ ভূমিতেই। এজন্য বিশ্বের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। তাকে দিতে হবে মাতৃশ্রদ্ধা।
শঙ্কার বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের শীর্ষে রয়েছে আমাদের দেশ। যদিও জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী এক দেশের কর্মকাণ্ড যেন অন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি না করে সেদিকে লক্ষ রাখা নিজ নিজ দেশের দায়িত্ব। এ বিষয়ে সরকারকে সচেতন হতে হবে। আর বিশ্বের প্রতি ভালোবাসা থেকে ব্যক্তিজীবনে আমাদের অবস্থান থেকে আমরাও ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে ধরিত্রীর জন্য অবদান রাখতে পারি। এটা হতে পারে বিদ্যুত্, গ্যাস বা পানির অপচয় রোধ করার মতো ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হতে পারে গাছ লাগানোর মতো মহত্ কাজ। আমরা কমিয়ে ফেলতে পারি গাছ বা পাহাড় কাটা। নিজেদের পরিচিত করতে পারি ইকো-ফ্যাশনেবল জাতি হিসেবে।
ওয়েব থেকে সংকলিত