অস্তিত্ব সংকটে গোলাপি ডলফিন

আজিজুর রহমান

আমাজনের গোলাপি ডলফিন (7)কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের প্রায় নদ-নদীতেই প্রচুর ডলফিন দেখা যেত। স্থানীয়ভাবে এদের শুশুক বা শিশু বলা হতো। পদ্মা তীরবর্তী বিক্রমপুরের মানুষ এসব ডলফিনকে বলে শুই। বর্ষাকালে এরা খালেও বিচরণ করত। গাঙ্গেয় শুশুক নামে এরা এক প্রজাতির ডলফিন। এখন আর এদের নদ-নদীতে তেমন একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশে ডলফিনের বিচরণস্থল উপকূলীয় এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় এলাকা ডলফিন, তিমিসহ সব জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীয় বিকাশের জন্য সহায়ক হওয়ায় ওই এলাকাই এদের প্রধান বিচারণস্থলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮ প্রজাতির ডলফিনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে গাঙ্গেয় শুশুক বা ডলফিন, ইরাবতী ডলফিন, পাখনাহীন পয়পয়েস ডলফিন, থেবরা দাঁত ডলফিন, বোতল নাক ডলফিন, চিত্রা ডলফিন, ঘূর্ণি ডলফিন ও গোলাপি ডলফিন। ২০০৪ সালে গোটা উপকূলীয় এলাকায় ১০ দিনব্যাপী যে ডলফিন জরিপ চালানো হয় তাতে দেখা যায়, সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ইরাবতী ডলফিন। এরপর সংখ্যার দিক থেকে বেশি আছে। পাখনাহীন পয়পয়েস ডলফিন। আর রয়েছে গোলাপি ডলফিনের বড় একটি সংখ্যা। গোলাপি ডলফিনকে কখনো কখনো সুন্দরবনের নদ-নদীতে দেখা যায়। এরা মূলত উপকূলীয় জলাশয়ে বাস করে। মিঠাপানির ডলফিনদের মধ্যে গোলাপি ডলফিনের আকার সবচেয়ে বড়। লম্বায় এরা ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ওজন হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি। গোলাপি ডলফিন দেখতে ধূসর ডলফিনের মতোই। সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে এরা বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা ৯ থেকে ১২ মাস মায়ের পেটে থাকে। জন্মের পরে বাচ্চার আকার হয় ৩০ ইঞ্চি লম্বা এবং ওজন হয় মাত্র ১ কেজি। অন্যান্য ডলফিনের মতো গোলাপি ডলফিনের পিঠে পাখনা থাকে না। সেখানে থাকে কুঁজের মতো একখণ্ড মাংসপিণ্ড। সেটাই এদের পাখনার কাজ করে। অন্য প্রজাতির ডলফিনের লেজের চেয়ে এদের লেজের আকার একটু বড়। গোলাপি ডলফিন নিজেদের ঘাড় ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকাতে পারে। অর্থাৎ উল্টো দিকে মাথা ঘোরাতে পারে। যা অন্য ডলফিনরা পারে না। ফলে শিকার করার ক্ষেত্রে ওদের এ ক্ষমতা বেশ কাজে লাগে। এদের খাবার ছোট মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, কচ্চপের বাচ্চা ইত্যাদি। গোলাপি ডলফিন বেশ বুদ্ধিমান। খুব সহজেই ওরা মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে।
জেলেদের জালে আটকা ডলফিনের মৃত্যু, খাদ্য সংকট জনবসতি থেকে দূষণ এবং উজানে বাঁধ নির্মাণের কারণে ঊর্ধ্বস্রোতীয় এলাকা মিঠাপানির সরবারহ কমে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে হুমকির মুখে পড়েছে গোলাপি ডলফিন। এছাড়া বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ঝুঁকিতো আছেই। এসব কারণে বাংলাদেশের জলাশয়ে ডলফিনের দীর্ঘস্থায়ীভাবে টিকে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ১৮/০৭/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics