অসুলভ পাখি তুলিকা

আলম শাইন
দেখতে চড়–ই পাখির মতো মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা চড়–ই নয়। পরিযায়ী পাখি এরা। প্রচণ্ড শীতে ইউরেশিয়া থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। শীত মৌসুমে দেশের সর্বত্রই এদের বিচরণ হলেও সংখ্যায় সন্তোষজনক নয়। বলা যায় অসুলভ। ঢাকা শহরেও দেখা যায়। বিশেষ করে মিরপুরের উদ্ভিদ উদ্যানে মাঝে মাঝে নজরে পড়ে। হালকা বনাঞ্চল এলাকা এদের প্রিয়। আম-বাঁশ বাগানে বেশি নজরে পড়ে। জলপানের তৃষ্টা না পেলে জলাশয়ের ধারে-কাছে পারতপক্ষে ভিড়ে না। এরা ভীতু প্রকৃতির পাখি হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যের সন্ধানে মাটিতে নামে। এমতাবস্থায় ভয় পেলে ‘ছিস’ আওয়াজ করে উড়ে যায়। ভয় কেটে গেলে পুনরায় মাটিতে নেমে খাবার খায়। গান গায় ‘ছিপ-ছিপ-ছিয়া-ছিয়া’ সুরে। এ পাখি ছোট-বড় দলে আলো-আঁধারি ভূমির ওপর পোকামাকড় খোঁজে। বিশেষ করে মাঠে-ময়দানে দৌড়ে দৌড়ে শিকার ধরে। খঞ্জন পাখির মতো এরাও লেজ নাচায়। সারাক্ষণ নয়, মাঝে মধ্যে নাচায়। প্রথম সাক্ষাতে লেজ নাচানো অবস্থায় দেখি মিরপুরের চিড়িয়াখানায়। বন্দি অবস্থায় নয়। মুক্ত। চিড়িয়াখানার ফাঁকা জায়গায় ৩-৪টি পাখিকে খাবারের সন্ধানে দেখি কোনো এক শীতে। সময়টা নব্বই দশকের প্রথমার্ধে। তখনো পাখি পর্যবেক্ষণ করতে বনে-বাদাড়ে প্রবেশ করিনি। চোখের সামনে পড়লে দেখে নেই এ পর্যন্তই। আর বড়জোর চিড়িয়াখানায় গিয়ে পশু-পাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে নোট খাতায় টুকিটাকি লিখে রাখি। সত্যি বলতে কি সে থেকেই মূলত আমি পাখি পর্যবেক্ষণ করার উৎসাহ বোধ করি। সে যাই হোক, পাখিটাকে দেখে প্রথমত খঞ্জন প্রজাতির পাখি ভেবেছি এবং আমার নোট খাতায় ওদের নাম ‘খঞ্জন পাখি’ লিখে রাখি। পরে ভুলটা শুধরে নিয়েছি রেজা খানের ‘বাংলাদেশের পাখি’ নামক গ্রন্থের শরণাপন্ন হয়ে। গ্রন্থ পাঠে জেনেছি ওদের সঠিক বাংলা নামটিও।
পাখিটার বাংলা নাম : ‘তুলিকা’, ইংরেজি নাম : ‘অলিভ ব্যাকেড পিপিট’(ঙষরাব-নধপশবফ চরঢ়রঃ), বৈজ্ঞানিক নাম : (অহঃযঁং ঐড়ফমংড়হর )।
লম্বায় এরা ১৫ সেন্টিমিটার। লেজ ৬ সেন্টিমিটার। গলার পাশে কালো ডোরা। ঠোঁট ছোট। দেহের অধিকাংশ পালক সবুজাভ-জলপাই। তার ওপর চওড়া, খাটো ডোরা দাগ। ডানায় স্পষ্ট সাদা বন্ধনী। তলপেটের দিকে কোনো ধরনের রেখা নেই। লেজের তলার দিকটা সাদাটে। আবার লেজের দু’পাশের পালকও সাদাটে। চোখের বলয় সবুজাভ-জলপাই। ভ্রুর ওপরে সাদা ডোরা। পা হলুদাভ-বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। তুলিকা পাখির প্রধান খাবার পোকামাকড়, ঘাসবীজ ইত্যাদি। প্রজনন সময় মে-জুলাই। বাসা বানায় সরু-নরম লতা দিয়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী গবেষক ও পরিবেশবাদী লেখক।

সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ৪/৫/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics