অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই নিরাপদ খাদ্য আইন মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয়বার অনুমোদন- পবা
রাসায়নিক বিষ মেশানো খাবার খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে কিডনী নষ্ট হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যারা খাদ্যদ্রব্যে বিষ মিশিয়ে নিরবে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, একটা জাতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে তাদেরকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রেখে যে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ মন্ত্রিসভা আনুমোদন করেছে কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনে প্রথমবার একটি অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব সাত বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক দশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। পুনরায় একই অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব চৌদ্দ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক বিশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন বিধান রেখে জাতীয় সংসদের বর্তমান অধিবেশনে আইনটি পাশ করতে হবে। আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, দুপুর ১২টা, পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) র উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, নির্বাহী সদস্য শামীম খান টিটো, কাবেরী মোস্তফা, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়- ০১ জুলাই ২০১৩ তারিখে মন্ত্রিসভা নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ (খসড়া) অনুমোদন করে। আইনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের শাস্তির জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও বিভিন্ন অংকের অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে এবং প্রথমবার একটি অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব সাত বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক দশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। পুনরায় একই অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব চৌদ্দ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক বিশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। ইহা ছাড়াও উক্ত দোকান, কারখানা ও উহার যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা যাইবে। ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ এর খসড়া মন্ত্রিসভা ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে পুণরায় অনুমোদন করেছে। অনুমোদিত এই আইনের খসড়ায় অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আমরা জানিনা কাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদিত আইনটি আবার নতুন করে মন্ত্রিসভায় রিভিউ করার জন্য উঠনো হয়েছে এবং শান্তির মেয়াদ কমানো হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সর্বশেষ খসড়ায় ক্ষতিপুরণের বিধানও রাখা হয়নি।
আমাদের দেশের অতি মুনাফা লোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, ব্যবসায়ী খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করছে। ফল, মাছ, শাকসবজিতে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কীটনাশক, কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামক ব্যবহার করা হচ্ছে। মাছ, টমেটোতে ব্যবহৃত হচ্ছেঃ ফরমালিন। আম, কলা, আনারস, লিচু এবং অন্যান্য ফলে ব্যবহৃত হচ্ছেঃ কার্বাইড, ইথেফেন, ফরমালিন, কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামক । মিষ্টিতে কৃত্রিম মিষ্টিদায়ক, আলকাতরা এবং কাপড়ের রং প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর দেশে ৫০ টনের স্থলে ২০০ টনের অধিক ফরমালিন আমদানি হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় চার গুণ বেশি । নানা ধরনের বিষাক্ত ও নিম্নমানের খাদ্যের কারণে আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরতর অসুখের ঝুকি নিয়ে বড় হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ২কোটি মানুষ কিডনী রোগের আক্রান্ত, ক্যান্সার প্রতিষেধক ব্যবহার বছরে বিশ শতাংশ হারে বাড়ছে, বাড়ছে মাতৃগর্ভে শিশু মৃত্যু, এবং জন্ম হচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু ।
এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পংঙ্গু জাতিতে পরিনত হব । বিষাক্ত খাদ্য নিরব ঘাতক হিসাবে কাজ করছে। গণহত্যামূলক এ অপরাধে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করার ফলে অতি মুনাফ লোভী অসৎ খাদ্য ব্যবসায়ীদের তান্ডবতা বেড়েই চলছে।
পবা বিগত কয়েক বছর ধরে সেমিনার, আলোচনা সভা, গোলটেবিল বৈঠক, মানববন্ধন আয়োজনসহ জনগণকে সাথে নিয়ে বিষমুক্ত খাদ্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের বিষাক্ততা ও ভেজালের ব্যাপকতা বন্ধে, বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কঠোর শাস্তির বিধানসহ সময়োপযোগী খাদ্য আইন প্রণয়ন এবং একক সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য পবা দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছে। বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহতা বিবেচনায় সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পবা নিরাপদ খাদ্য আইন(খসড়া) এর উপর গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনপূর্বক বৈঠকের সুপারিশ খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। যাতে আইন – এ ১০ বছর কারাদন্ড, বা অনধিক দশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রাখার সুপারিশ করা হয়।
অনেক দেরিতে হলেও সরকার ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। যার ফলে জনগণ নিরব গণহত্যা থেকে রক্ষা পাবে এটাই আমাদের কামনা ও প্রত্যাশা। কিছু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো সরকার এ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অতি মুনাফা লোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, ব্যবসায়ীদর পক্ষ নিয়েছে, পক্ষান্তরে ব্যবসায়ীরা খাদ্যে বিষ মিশাতে আরো উৎসাহিত হবে।
খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মিশানোর সাথে জড়িত ও ফরমালিনযুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ২৫-গ ধারায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। বিশুদ্ধ খাদ্য (সংশোধিত) আইন, ২০০৫ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য অনূর্ধ্ব তিন বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক